পেকুয়ায় প্রতারণার অভিযোগে মা-ছেলেসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় জমি ক্রয়ের আড়াই বছর পর হঠাৎ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের বন্ধকি (মর্গেজ) দাবি ঘিরে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে এক প্রবাসী পরিবার। জমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি, উপজেলা ভূমি অফিসে নামজারি, এমনকি বহুতল ভবন নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন করার পরও জমির প্রকৃত অবস্থা গোপন রেখে প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে একই পরিবারের মা-ছেলের বিরুদ্ধে। বিষয়টি বর্তমানে বিচারাধীন, এবং থানায় তদন্তাধীন রয়েছে।
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ওই জমির মালিক সৌদি প্রবাসী মো. আবদুর রহমান, তার পিতা মো. হোছন এবং শ্বশুর ইউপি সদস্য জাফর আহমদের পক্ষে শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) পেকুয়ায় এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তারা এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত প্রতারণা’ ও ‘সংঘবদ্ধ দালালচক্রের কাজ’ বলে অভিযোগ করেন।
২০২৩ ও ২০২৪ সালের মধ্যে কক্সবাজারের পেকুয়া সদর ইউনিয়নের শেখের কিল্লা ঘোনা মৌজার ১৬ শতক জমি ক্রয় করেন মো. আবদুর রহমান। জমিটি তিনি আহমদ নুর ও তার মা বুলবুল আক্তারের কাছ থেকে সাব-রেজিস্ট্রিমূলকভাবে ক্রয় করেন। জমির পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পর জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং উপজেলা ভূমি অফিসে নামজারির মাধ্যমে খতিয়ানও সৃজন হয়।
এরপর তিনি শান্তিপূর্ণভাবে জমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। বর্তমানে নির্মাণাধীন ভবনটি ৪তলা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং এই প্রকল্পে প্রবাসী আবদুর রহমান প্রায় ১ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করেছেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
কিন্তু, চলতি বছরের জুলাই মাসে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক হঠাৎ করে উক্ত জমির উপর একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়, যেখানে উল্লেখ করা হয়—“এই সম্পত্তি আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের কাছে বন্ধক রয়েছে।”
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দাবি করে, বিক্রেতা আহমদ নুর তাদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করেন এবং ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে জমিটি বন্ধক রাখা হয়। ব্যাংক আরও জানায়, এখনো প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। সেই অর্থ পরিশোধ না করায় তারা জমির মালিকানা ফিরে পেতে আদালতে মামলা দায়ের করে, যেখানে প্রবাসী আবদুর রহমানকেও বিবাদী করা হয়েছে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, যদি জমি বন্ধক রাখা থাকে, তাহলে সেই তথ্য সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও ভূমি অফিসে কিভাবে গোপন থাকে? কেন ব্যাংক এতদিন পর এসে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দাবি করছে জমির উপর তাদের মালিকানা রয়েছে?
ঘটনার পর প্রবাসী আবদুর রহমান নিজেও চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে আহমদ নুর, বুলবুল আক্তার ছাড়াও তাদের আত্মীয় ইমতিয়াজুল হক, আমিনুল হক ও তাজুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। আদালত পেকুয়া থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ব্যাংকের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমানের পরিবারকে মৌখিকভাবে জানান, “জমি সংক্রান্ত এই মামলায় ক্রেতার দায় নেই, বরং বিক্রেতাই প্রতারণা করেছেন।” তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি।
পেকুয়া থানায় পুলিশি তদন্ত চলাকালে আহমদ নুর এক পর্যায়ে দাবি করেন—জমি বিক্রির শর্ত অনুযায়ী ব্যাংকের ৪০ লক্ষ টাকা ক্রেতা আবদুর রহমানকেই পরিশোধ করার কথা ছিল। তবে এ সংক্রান্ত কোনো লিখিত চুক্তি তিনি দেখাতে পারেননি।
এই বিষয়ে শিলখালীর ইউপি সদস্য জাফর আহমদ বলেন, “জমি কেনার সময় বা রেজিস্ট্রির সময় এমন কোনো শর্ত ছিল না। রেজিস্ট্রি দলিল ও ভূমি অফিসের রেকর্ডে মর্গেজ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। এটা একটি চক্রের ষড়যন্ত্র, যারা প্রবাসীদের টার্গেট করে প্রতারণা করছে।”
এই ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুর রহমানের পরিবার স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রতারণা নয়, এখানে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে। যার মধ্যে কিছু দালাল, রেজিস্ট্রি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা এবং কিছু ব্যাংক কর্মকর্তা পর্যন্ত জড়িত থাকতে পারে।”





